নাফাখুম আমিয়াখুমের আপস্ট্রিমে কিছু মুহূর্ত।

নাফাখুম আমিয়াখুমের আপস্ট্রিমে কিছু মুহূর্ত।

লিখেছেনঃ

তানভীর মাহমুদ কনক

 

চারদিকে বড় বড় পাহাড়। এরই মাঝে বয়ে চলেছে রেমাক্রি খালের একটি ধারা। এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে দানবাকৃতির বিশাল সব পাথরের চাঁই বা বোল্ডার। শত, হাজার বছর ধরে পাহাড়ের বুকে জল পাথরের এ রাজ্যে কুম্ভকর্ণের মত যেন ঘুমিয়ে আছে এরা।

চারদিকে নিস্তব্ধতা। নেই কোন কোলাহল। কান পাতলে শোনা যায় অদ্ভুত এক নীরবতা।

সময় যেন এখানে এসে থমকে গিয়েছে। সৌন্দর্য যেন এখানে এসে আটকে গিয়েছে, বেড়ে গিয়েছে বহুগুণে।

আমিয়াখুমের আপস্ট্রিমে এ সব কিছুর সমন্বয়ে জন্ম নেয় ভালো লাগার কিছু মুহূর্ত

যেভাবে যাবেনঃ ঢাকা > বান্দরবান (বাস) > থানচি (বাস/জিপ) > পদ্মমুখ (ইঞ্জিন চালিত নৌকা) > থুইসাপাড়া (হাঁটাপথ) > দেবতার পাহাড় (হাঁটাপথ) > আমিয়াখুম (হাঁটাপথ) > নাইক্ষ্যং মুখ (হাঁটাপথ)

খরচ:

ঢাকা-বান্দরবান-ঢাকা = ১২৪০ (বাস)

বান্দরবান-থানচি = ৬০০০ (রিজার্ভ জিপ - ১৩ জন)

থানচি থেকে বান্দরবান ফেরার পথে জিপ কিছুটা কম পড়তে পারে।

থানচি-পদ্মঝিরি = ১০০০ (বোট - ৫ জন)

রেমাক্রি-থানচি = ২৫০০-৩০০০ (বোট - ৫ জন)

গাইড = ৫০০০-৬০০০ (৩ দিনের জন্য)

থুইসা পাড়ায় থাকা = পার নাইট ১৫০ করে

থুইসা পাড়ায় খাওয়া = পার বেলা ১৫০ টাকা

বাকি থাকে অন্যান্য জায়গায় খাওয়া ও অন্যান্য টুকিটাকি খরচ। সেটা নিজের উপর।

৩ দিনের ট্রিপ প্ল্যান:

১ম রাত : ঢাকা থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা।

amiakhum nafakhum

১ম দিন : সকালে বান্দরবান পৌঁছে থানচির উদ্দেশ্যে জিপে বা বাসে রওনা। থানচি পৌঁছাতে জিপে ২.৫-৩ ঘন্টা আর বাসে ৪/৪.৫ ঘন্টার মত লাগবে। থানচি পৌঁছে বিজিবি ক্যাম্প এবং পুলিশ ক্যাম্পে রিপোর্ট করে ট্রলারে করে, লাঞ্চ সেরে পদ্মঝিরির উদ্দেশ্যে যাত্রা। পদ্মঝিরি পৌঁছাতে ৪০-৫০ মিনিট লাগে। পদ্মঝিরি থেকে ট্রেকিং শুরু। রাতে থুইসা পাড়াতে থাকা। ঝিরিতে পানি কম থাকলে পদ্মঝিরি থেকে ট্রেকিং করে থুইসাপাড়া পৌঁছাতে কম বেশি ৭-৮ ঘন্টার মত লাগবে। পথ কিছুটা কঠিন এবং কষ্টসাধ্য।

২য় দিন: খুব সকালে থুইসাপাড়া থেকে আমিয়াখুমের দিকে যাত্রা। আমিয়াখুম পৌঁছাতে ২/২.৫ ঘন্টা লাগবে। সারাদিন আমিয়াখুম ও এর আশেপাশের খুমগুলো ঘুরে বিকালের মধ্যে আবার থুইসাপাড়ায় ব্যাক। রাতে থুইসা পাড়ায় থাকা।

৩য় দিন: এদিন কোন সময় নষ্ট করা যাবেনা। টাইট শিডিউল। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে জিনাপাড়া হয়ে নাফাখুম যাওয়া। নাফাখুম দেখে রেমাক্রি পর্যন্ত হেঁটে এসে ট্রলারে থানচি ব্যাক। থানচি এসে জিপ বা বাসে বান্দরবান। বান্দরবান থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা।

বি:দ্র:

১/ ট্রেইলে ও পানিতে পলিথিন বা প্লাস্টিক জাতীয় কোন অপচনশীল দ্রব্য ফেলবেন না। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন।

২/ ভেলায় উঠার আগে ভেলাটি যথেষ্ট মজবুত কিনা তা পরখ করে নিবেন।

৩/ খুম বেশ গভীর হয়। তাই যারা সাঁতার জানেন না নিরাপত্তা বিবেচনায় অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পরিধান করবেন। নিজে সতর্ক থাকুন। অন্যকে সতর্ক করুন।

৪/ যাদের পাহাড়ে হাঁটাচলা করার অভ্যাস নেই তাদের ক্ষেত্রে বর্ষাকালে এসব ট্রেইলে না যাওয়াই শ্রেয়। নতুনদের জন্য বর্ষার শেষে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সবচেয়ে ভালো সময়। তখন বৃষ্টি কম থাকে। বৃষ্টি না থাকলে ট্রেকিং করা তুলনামূলক সহজ। আর তখন খুমেও যথেষ্ট পরিষ্কার পানি পাওয়া যায়।

বিশেষ সংযুক্তিঃ

যারা এই পোস্ট পড়ে ঈদের ছুটিতে যাওয়ার চিন্তা করছেন তাদেরকে ঈদের ছুটিতে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিবো।

প্রথমত, এখন ঈদের ছুটিতে বাসের টিকেট সহজে পাবেন না। আর ওখানেও সবকিছুর দরদাম বাড়তি পেতে পারেন। বড় ছুটিগুলোতে জিপ ভাড়া, নৌকা ভাড়া ইত্যাদি সবই বেড়ে যায়। ওখানে সবকিছুই চলে 'সিন্ডিকেট' পদ্ধতিতে :(

দ্বিতীয়ত, ঈদের পর এই টাইপের জায়গাগুলোতে ভালো ভিড় হওয়ার কথা। এই জায়গার আসল সৌন্দর্যই হলো এখানকার নীরবতা। এখন এখানে গিয়ে যদি শুধু মানুষের মাথা গুণতে হয় আর চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে হয় তাহলে আর ব্যাপারগুলো ভাল লাগবে না।

তৃতীয়ত, ঈদের পর বর্ষাকাল শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। নতুন বা অনভিজ্ঞদের জন্য বর্ষাকালে এই ট্রেইল খুব একটা সুখকর নাও হতে পারে। আবারও বলছি, নতুনদের জন্য বর্ষার শেষে যাওয়াই উত্তম।

mailযে কোন রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে মতামত বা অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন আর সর্বোচ্চ সংখ্যক রিভিউ দাতা হিসেবে জিতে নিন একটি জার্সি/টি-শার্ট ঃ   রিভিউ পেজ

yesUpcoming blog on: একটি বৃষ্টি ভেজা নির্ঘুম রাত!

দেখুন ৯০০ টাকায় ৫ জন আরামে কিভাবে খাবেন? @ কাচ্চি ভাই বিরিয়ানি | Kacchi Bhai in Bashundhara R/A | Best Biryani in Dhaka

Related Posts


Recent Posts


Categories


Tags